নোয়াখালীর হাতিয়ার বুডিরচর ইউনিয়নের নুর নবী, গ্রামে তিনি পরিচিত সমাজসেবক হিসেবে। তবে আসল পেশা ডাকাতি। বিভিন্ন জেলা শহরে ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করেন তিনি।
তবে অন্য কিছু নয়, ডাকাতির সুবিধার জন্য বেছে নিয়েছেন সিগারেটকে। কারণ সিগারেট এক জায়গায় গোছানো থাকে, আবার সহজে বিক্রিও করা যায়। তবে ২০ লাখ টাকার নিচে কোনো ডাকাতির কাজ করেন না নুর নবী।
সীতাকুন্ডের বাড়বকুন্ড এলাকা থেকে রোববার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নগরীর ডবলমুরিং থানায় সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান উপপুলিশ কমিশনার (পশ্চিম জোন) আব্দুল ওয়ারিশ।
তিনি জানান, গত সাত বছরে ১০ জেলায় ৩০টি ডাকাতি করেছেন নুর নবী। লুট করেছেন ১০ কোটি টাকার সিগারেট। সর্বশেষ ২৭ মে ১১ জন সঙ্গী নিয়ে নগরীর পোস্তারপাড় এলাকায় আবুল খায়ের গ্রুপের ডিলার খাজা ট্রেডার্সের গোডাউনে ডাকাতি করে ৪০ লাখ টাকা মূল্যের ১০১ কার্টন সিগারেট লুট করেন তিনি। আর এতেই আটকে গেছেন পুলিশের জালে।
কমিশনার বলেন, ‘২৭ মে আবুল খায়ের গ্রুপের ডিলারের গোডাউনে ডাকাতির ঘটনায় অভিযান চালিয়ে তিন জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শুরুতে ডাকাত দলের মূল হোতা নুর নবীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যে ডাকাতির মালামাল নেয়া কুমিল্লার বাছিগাঁও এলাকার মো. শাহজান এবং তার ছেলে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসসির শিক্ষার্থী এনায়েত উল্লাহ শান্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছে জব্দ করা হয় ৯২ কার্টন সিগারেট এবং ৬৮ হাজার টাকা।’
তিনি বলেন, ‘ডাকাতির মালামাল নিয়মিত তুলনামূলক কম দামে সংগ্রহ করতেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন বাবা-ছেলে।’
কমিশনার আব্দুল ওয়ারিশ জানান, ‘পতেঙ্গার আকিজ বিড়ি গোডাউন, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, সিলেট, সাভার, কুড়িগ্রাম, ঢাকা, রাউজান, মুন্সিগঞ্জসহ বিভিন্ন এলকায় গত ৭ বছরে ৩০টি ডাকাতির ঘটনায় অন্তত ১০ কোটি টাকার সিগারেট লুট করেছে বলে স্বীকার করেছে নুর নবী। এর মধ্যে চলতি বছরে ইতোমধ্যে ডাকাতি করেছে প্রায় এক কোটি টাকার সিগারেট।’
ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘নুর নবীর এই ডাকাত চক্র খুবই ভয়ঙ্কর। ডাকাতির সময় গাড়ি নিয়ে বের হয়। গাড়িতে রশি থাকে সবসময়। ডাকাতির ঘটনা কেউ দেখে ফেললে তাকে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। ক্ষেত্রবিশেষে হত্যাও করে।
‘এখন পর্যন্ত তাদের হাতে খুন হয়েছেন দুইজন। কিছুদিন আগে পতেঙ্গা এলাকায় আকিজ বিড়ির গোডাউন ডাকাতির সময় দেখে ফেলায় নিরপত্তারক্ষীকে এবং অন্যজনকেও কুড়িগ্রামে একটি ডাকাতির সময় দেখে ফেলায় খুন করা হয়।’
ওসি মহসিন আরও বলেন, ‘নুর নবী এলাকায় সমাজসেবক হিসেবে সুপরিচিত। তার চুরি-ডাকাতির শুরুটা হয়েছে গরু চুরির মাধ্যমে। ধীরে ধীরে বিলাসবহুল ডাকাতে পরিণত হন তিনি। বিশ লাখ টাকার নিচে ডাকাতি করলে এখন নাকি তার পোষায় না।’
গ্রেপ্তারদের সোমবার বিকেলে আদালতে তোলা হবে বলেও জানান ওসি মহসীন।